জিম সিমন্স, তার মেডেলিয়ন ফান্ড এবং রেনেসান্স টেকনোলজিস

April 19, 2024 (1y ago)

9 min read

...

পরিচিতি

জিম সিমন্স একজন আমেরিকান হেজ ফান্ড ম্যানেজার, বিনিয়োগকারী, গণিতবিদ এবং সমাজসেবী। তিনি মেডেলিয়ন ফান্ড ও রেনেসান্স টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা। বিনিয়োগ বা ট্রেডিং এর জগতে জিম সিমন্সের নাম অনেক বিখ্যাত। ওয়ারেন বাফেট, স্টিভেন কোহেন, বা জর্জ সোরোসের মতো বিনিয়োগকারীদের থেকেও তিনি বিশেষ কারণে বেশ এগিয়ে।

মেডেলিয়ন ফান্ডের অসাধারণ সাফল্য

সিমন্সের প্রতিষ্ঠান রেনেসান্স টেকনোলজিসের একটি বিশেষ হেজ ফান্ড আছে, যার নাম মেডেলিয়ন। যারা ফিনেন্সিয়াল মার্কেট নিয়ে খোঁজখবর রাখেন, তারা অনেকেই জেনে থাকবেন যে, এই ফান্ডটি গত ৩০ বছরে গড়ে ৬৬% বার্ষিক মুনাফা রিটার্ন করেছে। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ব্র্যাডফোর্ড কর্নেলের মতে, ১৯৮৮ সালে মেডেলিয়ন ফান্ডে কেউ ১০০ ডলার বিনিয়োগ করলে, ৩০ বছর পর তা ৩৯৮.৭ মিলিয়ন ডলার হয়ে যেত।

অভিনব কৌশল

এমন অসাধারণ সাফল্যের পেছনে জিম সিমন্সের নানা ইউনিক স্ট্রাটেজি ছিলো। যেমন রেনেসান্স টেকনোলজিসের এর শুরুর দিকে তিনি ট্রেডিং অভিজ্ঞতা আছে, এমন কাউকে নিয়োগ দেননি। বরং গণিতবিদ, পরিসংখ্যানবিদ ও বিজ্ঞানীদের নিয়োগ দিয়েছিলেন, যারা ট্রেডিং বা বিনিয়োগ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

তখনকার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেখানে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন কোম্পানির অভ্যন্তরীন তথ্য, প্রতিবেদন বিশ্লেষণ, এবং জিও-পলিটিকাল ঘটনাবলীর উপর নির্ভর করতো, সিমন্স তখন ভিন্ন পথে হাঁটেন। তিনি মার্কেটকে একটি লজিকাল প্রসেস হিসেবে দেখতেন এবং বিনিয়োগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করলেন।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

ছোটবেলা থেকেই সিমন্স বুঝে গিয়েছিলো যে Money is Power। তাই তখন থেকেই তিনি প্রচন্ড ধনী হতে চেয়েছিলেন। তার পরিবার ডাক্তার হতে উৎসাহিত করলেও তিনি বড় হয়ে গণিত নিয়ে পড়াশুনা করেন। এমআইটি থেকে ব্যাচেলর এবং ইউসি বার্কলি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি এমআইটি ও হার্ভার্ডে শিক্ষকতা করেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময় তিনি হার্ভার্ড ছেড়ে একটি এলিট গবেষণা সংস্থায় কোড-ব্রেকার হিসেবে যোগ দেন, যা আমেরিকার গোপন গোয়েন্দা সংস্থা, NSA-তে সোভিয়েত ইউনিয়নের এনক্রিপ্টেড বার্তা ডিকোড করতে সাহায্য করতো।

কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে কোড-ব্রেকিং পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর তিনি একটি বিনিয়োগ ব্যাংকে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তবে শেষমেষ আবারো একাডেমিয়াতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। লং আইল্যান্ডের স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটিতে গণিত বিভাগের প্রধান হিসাবে তাকে চাকরি প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেখানে তিনি ৩০ বছর বয়সে নিজের গণিত বিভাগ গড়ার সুযোগ পান। স্টনি ব্রুকে থাকাকালীন, তিনি এমন একটি ম্যাথম্যাটিকাল থিওরী ডেভোলাপ করেন যা পরে মাইক্রোসফ্ট এবং অন্যান্য কোম্পানির কাজের ভিত্তি তৈরি করে ও বর্তমান আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সহ কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করতে সাহায্য করে।

কিন্তু এসময় তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা দেখা দেয়। তার স্ত্রীর বারবারার সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে, বারবারা তার কম্পিউটার সাইন্সের পিএইচডি সম্পন্ন করতে ইউসি বার্কলিতে চলে যায়। এর কয়েক বছর পর, সিমন্স আবার একাডেমিয়া ছেড়ে অর্থনীতির জগতে প্রবেশের জন্য নিজের ইনভেসমেন্ট ফার্ম শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর পিতা এবং সহকর্মীরা মনে করেছিলেন যে তিনি তাঁর প্রতিভা অপচয় করছেন এবং একটি নিরাপদ অবস্থান ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু সিমন্সের সবসময় সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন – তার অসংখ্য অদ্ভুত ছোট ছোট অভ্যাস ছিলো, একটি মজার অভ্যাস উল্লেখ না করলেই নয়। পায়ে মোজা পড়তে সময় লাগে বিধায় তিনি মোজা পড়াই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

রেনেসান্স টেকনোলজিসের জন্ম

সিমন্স এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং ৪০ বছর বয়সে স্টনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে লং আইল্যান্ডের স্ট্রিপ মলে একটি ছোট অফিস খোলেন। এভাবেই ১৯৭৮ সালে রেনেসান্স টেকনোলজিসের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে এর নাম ছিল মোনেমেট্রিক্স, যারা মূলত অর্থনীতির তথ্যাদি গণিত ও পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করতো। মূল লক্ষ্য ছিলো যেভাবে করে কোড-ব্রেকার হিসেবে সোভিয়েতের কোড ডিকোড করতেন, তেমনভাবে মার্কেট এনালাইজ করে সেখান থেকে প্রেডিকশন বের করা।

সিমন্স জুকারম্যানকে তাঁর বইতে বলেছিলেন, “এখানে(মার্কেটে) প্যাটার্ন রয়েছে; এখানে অবশ্যই প্যাটার্ন থাকতে হবে।” অর্থ্যাৎ মার্কেটে তিনি প্যাটার্ন থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন।

অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং সিস্টেম

সিমন্স একটি পুরোপুরি অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং সিস্টেমের কল্পনা করেছিলেন, যেখানে কোনও মানুষের হাত থাকবে না। এজন্য রেনেসান্স প্রথমে মুদ্রা, পণ্য এবং বন্ডে বিনিয়োগ করে, আর শুরুর দিকে জটিলতা এড়াতে স্টকে ইনভেস্ট করা এড়িয়ে যায়, পরে অবশ্য তারা স্টকেও ইনভেস্ট করে।

ম্যাথমেটিকাল মডেল - একটি উদাহরণ

এলগরিদমিক প্রসেস ও ম্যাথমেটিকাল মডেল সম্পর্কে বুঝতে নীচের ব্যাপারটি খেয়াল করুন। মনে করুন আপনি জানতে চান আগামীকালের আবহাওয়া কেমন হবে। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, আপনি যে স্থানে আছেন সে স্থানের এযাবতকালের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহের গতি ইত্যাদি ডাটা একটি ম্যাথমেটিকাল মডেলে ফিড করাতে হবে। মডেল তথ্যগুলি প্রসেস করে আগামীকালের আবহাওয়ার প্রেডিকশন দিয়ে দিবে এবং বলে দিতে পারবে যে আগামীকাল আপনার ছাতা নিয়ে বের হওয়া উচিত কি উচিত না।

রেনেসান্স টেকনোলজিসে মার্কেট ট্রেন্ড প্রেডিক্ট করার জন্য এমন খুবই কমপ্লেক্স আর সিক্রেট ম্যাথমেটিকাল মডেল ডেভোলাপ করা হয়েছিলো। অন্যদিকে, একজন সাধারণ ট্রেডার হয়তো তাদের আশেপাশের সূক্ষ্ম ইঙ্গিতের আর নিজের ইনটিউশনের উপর ভিত্তি করে মার্কেট প্রেডিক্ট করতো। রেনেসান্সের এই অভিনব পদ্ধতি বিনিয়োগের ধারণাকে পাল্টে দেয় এবং জিম সিমন্সকে বিনিয়োগের জগতের এক কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, আশির দশকের কম্পিউটারগুলো এরকম কমপ্লেক্স মডেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে এফিশিয়েন্টলি রান করতে সক্ষম ছিলো না। তাই শুরুরদিকে ম্যাথমেটিকাল মডেল থেকে পাওয়া ধারণা থেকে মানুষের ম্যানুয়াল ইনপুটে ট্রেড সম্পন্ন হতো।

তবে তাদের কাজের ধরনের কিছুটা পরিবর্তন ঘটে যখন জেমস অ্যাক্সকে আনা হয়। যিনি তাঁর পিএইচডির দিনগুলিতে ইউসি বার্কলিতে তাঁর বন্ধু ছিলেন। অ্যাক্স তাদের ম্যাথমেটিকাল মডেলগুলোকে আরো উন্নত করেন। এই পদ্ধতি দিয়ে তারা পুরানো ডেটা থেকে নতুন ডেটা পর্যন্ত মার্কেট ট্রেন্ডে লুকানো প্যাটার্নগুলি উন্মোচন করতে থাকে। সিমন্স বলেছিলেন, “যদি আমাদের যথেষ্ট ডেটা থাকে, আমি জানি আমরা প্রেডিক্ট করতে পারবো।”

সাইমন্স এবং অ্যাক্স নতুন একটি হেজ ফান্ড, মেডেলিয়ন চালু করেন। এর নামকরণ করা হয় দুজনের পাওয়া মেডেলিয়ান এওয়ার্ড থেকে। এটি শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে সফল হেজ ফান্ড হয়ে উঠে। শুরুর দিকে এটি লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছিলো। অ্যাক্স তাঁর কোম্পানি অ্যাক্সকম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অ্যাক্সকম রেনেসান্স থেকে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান হলেও রেনেসান্সের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলো।

তখন সিমিন্সের কোড-ব্রেকিং কাজের পুরোনো সহকর্মী এলউইন বার্লেক্যাম্প রেনেসান্সে যোগ দেন। বার্লেক্যাম্প অ্যাক্সের পুরো মালিকানা কিনে নেন, এবং পুরো ট্রেডিং সিস্টেমটি শর্ট-টার্ম ট্রেড এর উপর ভিত্তি করে পুনর্নির্মাণ করেন। বার্লেক্যাম্প ধারণা করেছিলেন, “যদি আপনি অনেক বেশী ট্রেড করেন, আপনাকে শুধু ৫১ শতাংশ সময় ঠিক হলেই চলবে।”

এই কৌশলের ফলে, রেনেসান্স টেকনোলজিস বাজারে একটি নতুন দিগন্ত তৈরি করে, এবং জিম সিমন্স বিনিয়োগের জগতে এক অভিনব ও ইনফ্লুয়েনশিয়াল ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পান। তাদের অ্যালগরিদমগুলিতে যথেষ্ট কাজ করার পরে এবং উন্নত কম্পিউটার প্রসেসিং ব্যবহার করার পর, রেনেসান্স ১৯৯০ সালে ট্রেডিং এর মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মেডেলিয়ন ফান্ড খরচসহ গড়ে ৫৮% লাভ করে। যেটা আসলেই অসাধারণ ছিলো।

কিন্তু সিমন্স বিশ্বাস করতেন ৫৮% চেয়ে ভালো করা সম্ভব এবং তার লক্ষ্য অনুযায়ী ৮০% রিটার্ন নির্ধারণ করেন। বার্লেক্যাম্প যখন এই লক্ষ্যকে অসাধ্য মনে করে একাডেমীয়ায় ফিরে যান, তবে সিমন্স তার লক্ষ্যে অবিচল থাকেন এবং তিনি বার্লেক্যাম্পের শেয়ার কিনে নেন।

এই পর্যায়ে রেনেসান্স শুধুমাত্র রেনেসান্স টেকনোলজিস নামে পরিচিত হয় এবং একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সিমন্স তাঁর দলকে আরও শক্তিশালী করেন এবং হেনরি লাউফার নামক একজন গণিতবিদকে নিয়োগ দেন, যিনি ট্রেডিং ডে কে ঘন্টার বদলে পাঁচ মিনিটের ইন্টার্ভালে ভাগ করে দেন। এর ফলে রেনেসান্স খুব দ্রুতই মূল্য পরিবর্তন সনাক্ত করতে পারে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। তাদের মডেলগুলি এতটাই সফল হয় যে তারা তাদের কম্পিউটারগুলিকে এমন সিদ্ধান্ত নিতো যেগুলো তারা নিজেরাও অনেকক্ষেত্রে বুঝতো না। অনেকটা এখনকার যে লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল(LLM) গুলো রয়েছে সেগুলোর ইন্টার্নাল এক্টিভিটি যেমন ভালোমতো বোধগম্য নয় এমন।

রেনেসান্স তখনও খুব ছোট ছিল। ব্যবসা শুরুর দশ বছর পরেও এটি কেবল ৪৫ মিলিয়ন ডলার পরিচালনা করছিল, যা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্ম ডি.ই. শ’র সম্পদের চতুর্থাংশ। ডেভিড শ কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ট্রেড করছিলেন, এবং – তিনি স্টক ট্রেড করছিলেন, যা রেনেসান্স তখনো করছিলো না।

সিমন্স জানতেন যদি তিনি সত্যিই একটি লিগ্যাসি রেখে যেতে চান, তাহলে তাকে স্টক ট্রেড শুরু করতে হবে। তিনি লং আইল্যান্ডে সব অপারেশন একত্রিত করেন। তবে নতুন পথে যাত্রা শুরু করার প্রাক্কালে একটি ট্র্যাজেডি ঘটে। সাইমন্সের ছেলে পল, স্টনি ব্রুকে সাইকেল চালানোর সময় একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা যান।

সন্তান হারানোর শোক সাইমন্সকে তাঁর কাজে আরও মনোনিবেশিত করে তোলে। স্টক ট্রেডিংএ দক্ষতা অর্জনের জন্য তাঁর আরও সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। সাইমন্স রবার্ট মার্সার এবং পিটার ব্রাউনকে নিয়োগ দেন, যারা IBM-এ text-to-speech কনভার্ট করার পথিকৃৎ কাজের জন্য পরিচিত। তাদের সাহায্যে সিমন্স এমন একটি সিস্টেম ডিজাইন করতে চেয়েছিলেন যা ফিনান্সিয়াল মার্কেটের ট্রেন্ডগুলো আরো সূক্ষ্ণভাবে প্রেডিক্ট করতে পারবে। তাদের কোডিং স্কিল দিয়ে, ব্রাউন এবং মার্সার ১৯৯৫ সালে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় স্টক ট্রেডিং সিস্টেম চালু করে যা প্রায় হাফ মিলিয়ন লাইনের কোড ছিলো, এবং এটি পুরানো সিস্টেমের তুলনায় অনেকগুণ বেশী এফিশিয়েন্ট ছিলো। মার্সার এবং ব্রাউন বড়সড় আপডেটের পর মেডেলিয়ন ফান্ড উড়ান নেয়।

১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে, রেনেসান্স মেডেলিয়ন ফান্ড আশ্চর্যজনক রিটার্ন দেখায়, এবং অবশেষে ২০০০ সালে তারা ৯৮.৫% রিটার্ন অর্জন করে। এই সময়ে ডট-কম বাবলের মধ্যেও তারা তাদের দক্ষতার প্রমাণ দেয়। সিমন্স তাঁর স্টাফদের অনেক ছুটি এবং বোনাস দিয়ে পুরস্কৃত করেন। এসময় ২০০৩ সালে মেডেলিয়ন ফান্ডে বাইরের বিনিয়োগ জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেডেলিয়ন ফান্ড শুধুমাত্র তাদের কর্মীদের জন্য সীমাবদ্ধ করা হয়। তবে এর ফান্ড ১০ বিলিয়ন ডলারে সীমাবদ্ধ করা হয়।

রেনেসান্স কীভাবে চমকপ্রদ ফলাফল অর্জন করেছে তা একটি রহস্য। কর্মীরা NDA চুক্তি দ্বারা সীমাবদ্ধ, ফলে রেনেসান্সে ব্যবহৃত কোড এবং অ্যালগরিদমগুলো বাইরের কারো সাথে শেয়ার করতে পারে না। ওয়াল স্ট্রিটের অনেক ফার্ম রেনেসান্সের কোড ভাঙার চেষ্টা করছে। তখন কোডিং জানাকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় রেখে জেপিমরগান চেজ নতুন বিনিয়োগ ব্যাংকার এবং ম্যানেজারদের জন্য কোডিং শেখা বাধ্যতামূলক করে তোলে।

সিমন্সের ব্যক্তিগত জীবনে আবারও দুঃখ আসে তাঁর ছেলে নিকোলাস বালিতে ফ্রিডাইভিং করার সময় ডুবে মারা যান। বিজ্ঞান ও যুক্তিতে এত দৃঢ় বিশ্বাসী একজন মানুষের জন্য, এই অসহনীয় ক্ষতি ছিল জীবনের অনিশ্চিততার এক কঠিন ধাপ।

শোক থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে আবারও সিমন্স কাজে নিমগ্ন হন। এরপর তিনি বড় একটি ফান্ড, রেনেসান্স ইনস্টিটিউশনাল ইকুইটিজ ফান্ড (RIEF) চালু করেন, যা বাইরের বিনিয়োগকারীদের ইনভেস্ট করার সুযোগ দেয়। RIEF ২০০৭ সালের সাবপ্রাইম মর্গেজ সংকট সামলে এবং ২০০৮ সালের Renaissance এর সময় ৮২% লাভ দেখায়, যা তাদের ট্রেডিং সিস্টেমের অসাধারণ উন্নতি এবং যেকোনো সিচুয়েশনে এডাপ্টিবিলিটিভ পাওয়ার প্রদর্শন করে।

এই অর্জনের পর, সিমন্স ২০০৯ সালে রেনেসান্স টেকনোলজিসের সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করেন, এবং পিটার ব্রাউন এবং রবার্ট মার্সারের হাতে নেতৃত্ব হস্তান্তর করেন। এই পরিবর্তন নতুন একটি যুগের সূচনা করে, যেখানে রেনেসান্স এখনও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নতুন কৌশল এবং উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

রেনেসান্স টেকনোলজিসের নতুন নেতৃত্বের অধীনে, পিটার ব্রাউন এবং রবার্ট মার্সার প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় নতুন কিছু ধারণা ও প্রযুক্তি প্রবর্তন করেন। তারা ডেটা এনালাইসিস এবং অ্যালগরিদম উন্নতির মাধ্যমে ট্রেডিং কৌশলগুলিতে আরো সূক্ষ্মতা আনেন, যা রেনেসান্সকে বাজারের অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে রাখে।

জিম সিমন্স নিজে বিনিয়োগের জগতে তার সকল লক্ষ্য অর্জন করার পর, বিভিন্ন ডোনেশনে নিজের মনোনিবেশ বৃদ্ধি করেন। তিনি স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটিতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দান করেন, বিশেষ গণিত শিক্ষকদের জন্য একটি অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, এবং অটিজম গবেষণার জন্য একটি দাতব্য ফাউন্ডেশন শুরু করেন। তাঁর সিমন্স ফাউন্ডেশন মহাবিশ্বের উৎপত্তি আবিষ্কারের দিকেও মনোনিবেশ করে, চিলির আটাকামা মরুভূমিতে একটি অবজারভেটরি নির্মাণ করে যা মহাবিশ্বের সৃষ্টির মুহূর্তের গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ অনুসন্ধান করবে।

জিম সিমন্স তার ক্যারিয়ারে এক বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত হলেও, তার সাফল্যের পিছনে তার ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সংগ্রাম অনেক গভীর। এই সব কিছুর মধ্যেও, সিমন্স তার আবিষ্কার ও অগ্রগতির প্রতি অবিচল থেকেছিলেন। সিমন্সের কর্মজীবন এবং তার অবদান তাকে কেবল একজন সফল ব্যবসায়ী বা গণিতবিদ হিসেবে নয়, বরং একজন মহান বিজ্ঞানী এবং দাতা হিসাবেও পরিচিত করে।

Loading reactions...
Similar Posts

Here are some other articles you might find interesting.

Get in touch

Have a question or want to work together? Send me a message!

Jahangir's Logo

I'm Jahangir - a Full stack Software Engineer and AI enthusiast. Thanks for checking out my site!

© 2025 Jahangir Hossain